সালেহ্ বিপ্লব: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাত্রীদের ভ্রমণের সময় মেট্রোরেলের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি বলেন, সকল যাত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, ভ্রমণের সময় মেট্রো রেলের নিয়ম ও নির্দেশিকা মেনে চলুন, এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি ভিত্তিক ট্রেন। সুতরাং, প্রত্যেকেরই এটি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত। বাসস

প্রধানমন্ত্রী যাত্রীদের মেট্রো রেল পরিষ্কার রাখতে এবং এখানে-ওখানে কোনও আবর্জনা না ফেলে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই মেট্রো রেল ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি চলতেই থাকবে। সুতরাং, নিয়ম এবং নির্দেশিকা অনুসরণ করে এটি ব্যবহার করুন। প্রত্যেকেরই এটি ব্যবহারের সময় মনে রাখা উচিত।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বিশেষ করে সংসদ ভবন এলাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে সে বিষয়েও জানান। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমরা যে কোনো কাজে যাওয়ার সময় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছিল। পদ্মা সেতুর মতো চ্যালেঞ্জ মেট্রোরেলেও ছিলো। আমরা সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সমস্ত প্রকল্প সম্পন্ন করেছি।

মেট্রোরেল প্রকল্প সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রাথমিকভাবে বিজয় সরণির মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল রুট তৈরি করা হয়েছিল যেখানে আমার ঘোর আপত্তি ছিল। তা হলে আমাদের তেজগাঁও বিমানবন্দর বন্ধ করে দিতে হতো, যেটির ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। একটা তৈরী করা এয়ারপোর্ট সেটা কখনো নষ্ট হোক আমি চাইনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি পুরানো অ্যালাইনমেন্ট কার্যকর করা হয় তবে সরকারকে ২২টি ভবন ভেঙে ফেলতে হোত এবং সে কারণেই আমি খামার বাড়ি এলাকা ব্যবহার করে নতুন রুট প্রস্তাব করেছি। যদিও আমাদের আঁতেল শ্রেণির তীব্র আপত্তি ছিল সংসদ ভবন নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে, খেজুর বাগান নষ্ট হবে। 

তিনি বলেন, লুই কানের ডিজাইন নিয়ে এসে সে সময় দেখলাম, সংসদ ভবনের পাশে যে দুটি মাঠ রয়েছে তার জায়গা এই ডিজিাইনে পড়ে না। তাছাড়া এই বাগানও নষ্ট হবে না। সব কিছু বিবেচনা করে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট সম্প্রসারণ করেছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় মেট্রোরেলের বাঁক এবং অবতরণের জায়গার জন্য  কমলাপুর রেলস্টেশনটি ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছিলাম যে, এত বড় স্টেশন ভেঙে আরেকটি নির্মাণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, স্টেশনটিকে অক্ষত রেখে আমরা কীভাবে এটি করতে পারি, প্রয়োজনে মেট্রো রেল স্টেশনের উপর দিয়ে যাবে বা তার বাঁক নেওয়ার জন্য অন্য জায়গা খুঁজে নেবে। এখন, এটি সেইভাবে বাস্তবায়ন করছে। 

শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ নষ্ট করবে বলে শিক্ষার্থীরা বাধা দিয়েছে। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি যে মেট্রো রেলের কারণে তারা কোন ঝামেলার সম্মুখীন হবে না, কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি কোণ দিয়ে যাবে যার কোন শব্দ থাকবে না, স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলবে।

শেখ হাসিনা জানান, হলি আর্টিজান আক্রমণের পরে এটির কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। কারণ এই প্রকল্পের সাথে জড়িত সাত জাপানি পরামর্শক নিহত হয়েছিল। সেই সময়ে সমস্ত জাপানিরা তাদের স্বদেশে ফিরে গিয়েছিল এবং তিনি নিজে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছে তার সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন। জাপান সফরে সাতজন নিহত জাপানি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছিলেন। তাদের  সান্ত¦না দেয়ার পাশাপাশি যা যা করণীয় সরকার করেছে এবং এরই প্রেক্ষিতে জাপান সরকার তার অনুরোধ বিবেচনায় নেয়।

তিনি স্মরণ করেন যে, আবার কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করে আমাদের প্রকৌশলীরা সঙ্গে মিলে কাজটি ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সম্পাদনা: এল আর বাদল